মা কবিতা আবৃত্তি শর্মিষ্ঠা মুখার্জি
ভালুক ঘটক
শুভ জিত দত্ত
বনে নাকি হঠাৎ করে
হৈচৈ পড়ে গেছে,
ভালুক করছে ঘটক গিরি
সবাই লাগলো পেছে।
বিয়ে এবার দিতে হবে
পড়লো বিশাল লাইন,
সবার থেকে একটা করে
নিচ্ছেন তিনি সাইন।
এদিক ওদিক সেদিক থেকে
সবাই ছুটে আসে,
তিনি এখন বিপদে পড়ে
জায়গা দিলেন ঘাসে।
তিনি এখন মহা বিপদে
গেলেন রাজার কাছে,
শুনে নিয়ে রাজা মশাই
বললো ওঠো গাছে।
বিয়ে তোমার দিতে হবে
হয়েছো যখন ঘটক ,
আমার সেনা তৈরি আছে
করবে তোমার আটক।
শিয়াল কাজী
"ধরিবাজ কালু"
-শুভ জিত দত্ত
ঘরের কাছে বাড়ির পাশে
থাকেন কালু দাদা,
তিনি নাকি বৃষ্টি হলে
মাখেন শুধু কাদা।
হঠাৎ করেই তিনি নাকি
হলেন পাড়ার মাথা,
সবাই এখন তাকে নিয়ে
শোনাই নানা গাঁথা।
তিনি এখন সবার মাঝে
হলেন নাটের গুরু,
আড়াল থেকে লোকে বলে
কালুর চামড়া পুরূ।
বিচার করে টাকা খেয়ে
পড়ার লোকে দোষে,
অর্থ দিয়ে তিনি আবার
লেঠেল গুলো পোষে।।
নেশার ঘরে হঠাৎ করে
যাকে তাকে মারে,
লোকে বলে কালু দাদার
ভূতু আছে ঘারে।।
শুভ জিত দত্ত
বাবা বলতেন মায়ের বাড়ি
এখন তারার দেশে,
সেখানে তিনি তাদের সাথে
থাকেন ভেসে ভেসে।
আমি যখন খুবই ছোট
বয়স দশ কি বারো,
হঠাৎ সামান্য জ্বরে তিনি
কাবু হলেন আরো।
বুদ্ধি আমার হয়নি তখন
কিছু বোঝার আগে,
কেমন করে ফাঁকি দিয়ে
চললেন আগে ভাগে।
বাবা যখন চোখের জলে
তোমার কথা বলতো,
একটু পরে কাঁদতে কাঁদতে
কষ্ট তখন কমতো।
ছবি হয়ে ছিলে তুমি
আমার মনের কোণে,
কেনো জানি তোমার কথা
ভাবি ক্ষণে ক্ষণে।
শুভ জিত দত্ত
ছোট্ট শোনা ছোট্ট শোনা
দেখতে তুমি ভালো,
তোমার কথায় সারা বাড়ি
জললো জ্ঞানের আলো।
ছোট্ট কথা ছোট্ট কথা
বলতে তুমি পারো,
হঠাৎ তুমি করলে ধাঁধা
বয়স যখন বারো।
ছোট্ট মুখে ছোট্ট মুখে
হাজার কথা বলো,
দিতে হবে কিনে তাতো
তুমি যথা বলো।
ছোট্ট হাসি ছোট্ট হাসি
যখন তুমি দিতে,
খেললে পরে কোনো খেলা
তুমি যাও জিতে।
ছোট্ট খুশি ছোট্ট খুশি
সবার মাঝে দাও,
কিনতে হবে তোমার খুশি
হয়কি আবার তাও।।
-শুভ জিত দত্ত
বাইরে প্রচুর গরম পরে
বৃষ্টির দেখা নাইরে,
জমে আছে অনেক কাজ
কেমন করে যাইরে।
সূর্য মামা মাথার উপর
হাহা করে হাসে,
গরম পড়লে একটু খেলে
মরতে হবে গ্যাসে।
গাছের পাতার নড়া চড়া
গরম এলে থামে,
রাস্তা দিয়ে চললে পড়ে
জীবন যায় ঘামে।
ওদিক থেকে বড়ো বাবু
রা রা করে আসে,
কলিগ গুলো তাইনা দেখে
ফেল ফেলিয়ে হাসে।
মেঘের সাথে বন্ধু করে
সূর্য মজা নেবে,
বৃষ্টির কবে আসবে নাকি
কেউ বলবে ভেবে।।
"এলো ফিরে খোকা"
-শুভ জিত দত্ত
খোকা এলো শহর থেকে
সঙ্গে নিয়ে গাড়ি,
অমনি দেখতে ছুটে আসে
বাড়ি ঘর ছাড়ি।
অবাক হয়ে চেয়ে থাকে
নতুন গাড়ির পানে ,
এদিক ওদিক চড়বে খোকা
চেপে নতুন যানে।
মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে
এলো বাড়ি ফিরে,
আশে পাশের মানুষ গুলো
সবাই ধরলো ঘিরে।
কতো কিছু আনলো খোকা
নিয়ে মায়ের শাড়ি,
সবাই বলে ঢাকায় নাকি
টাকা কাড়ি কাড়ি।
খোকা আবার যাবে ঢাকা
ফিরবে সময় হলে,
সামনে পড়ে করলে সুনাম
খোকা যায় গলে।।
।।সৌমেনের গাড়ি চড়া।।
কাকাবাবুর একমাত্র ছেলে বড্ড আদুরে। সব সময় ঘর বন্দি।বাইরে যাওয়া বলতে বাড়ির থেকে একটু দূরে কানাই লালের স্কুলে পড়ে সে । কাকাবাবুর বাড়ির সব কাজ রামদুলাল করে তার সাথে স্কুলে যায় সে। মাষ্টার মশাই সে দিন পড়ারছিলেন যানবাহন সম্পর্কে। হঠাৎ প্রশ্ন করলো যানবাহন কত প্রকার বলতো দেখি?সৌমেন উঠে দাঁড়িয়ে বললো চার প্রকার যথা: এক চাকা ,দুই চাকা তিন, চার চাকা।মষ্টার মশাই শুনে যেন হা হয়ে গেলেন।তখন মষ্টার মশাই প্রশ্ন করলেন তুই এসব কার কাছ থেকে শুনলি হে?উওরে বলল বাড়িতে রাম দুলাল জেঠুর কাছ থেকে।যাই হোক সেদিনের মতো ঘন্টা পরে গেল।সে ভাবলো জেঠু কত কিছু জানে।আবার প্রশ্নের উদয় হলো তার মনে! আচ্ছা জেঠু গাড়ি কি ভাবে চড়ে ?জেঠু উত্তরে বলল তুই গাড়ির সামনে দাঁড়ালে গাড়ি তোকে তুলে নিয়ে ছোটা শুরু করবে।সে মনে মনে ভাবলো সে কি অবাক যান।এবার প্রশ্ন নিয়ে হাজির বাবার কাছে গাড়ি কেমন দেখতে হয় ?উত্তরে বাবা সে তো চার চাকা বিশিষ্ট অদ্ভুত যান ভিতরে মানুষ বসিয়ে নিয়ে সে চলতে শুরু করে।বাবার কাছে বলেই ফেলল গাড়ি তে কবে উঠব ?যেদিন তোকে নিয়ে শহরে যাবো সেদিন তোকে আমি গাড়ি চড়াবো। তার মনে নানা অদ্ভুত ধারনা আসতে থাকে গাড়ি সম্পর্কে।কি জানি সে আবার কেমন হয়।মার কাছে শুনলাম গাড়ি নাকি প্যা পু শব্দ করে তার গায়ে কতো রকমের রং থাকে। গাড়ি আবার কথাও বলে নাকি জেঠুর কাছে শুনলাম। এবার গাড়িতে উঠতেই হবে গাড়ির কি ক্ষমতা এক জায়গা থেকে অন্য প্রান্তে নিয়েও যায়। গাড়িতে যদি উঠতে না পারি তাহলে জীবনই বৃথা।বাবা হঠাৎ সকালে বলল চল তোকে এবার চড়বো গাড়িতে। গেলাম সেই অদ্ভুত যান দেখতে।যা জেনেছিলাম তার ১৬আনা মিথ্যে।এদেখি ইঞ্জিন চালিত যান ।তেল ভরলে চলে চার চাকার যানটি।একজন চালক আর হেলপার তাড়াই কথা বলে সবই।সে কারো তুলতে পারেনা হেলপার মহাশয় সবাই কে টেনে তোলে। গাড়িকে সামনে থেকে দেখে সব প্রশ্নের উদ্বেগ দূর হলো।স্বপ্নের গাড়ি চড়ার শখ অবশেষে পূরণ হলো।টং টং করতে করতে পৌঁছে গেলামও শহরে।।
"বাঘের স্বপ্ন"
-শুভ জিত দত্ত
বাঘ আবার নতুন করে
রাজা হবে ভাবে,
গদি একবার পেয়ে গেলে
অনেক খাবার খাবে।
বানের পশু তার কথায়
উঠবে আবার বসবে,
যখন একটু করবে আগ্গা
শুনলেই ছুটে আসবে।
সেরা খাবার তাহার জন্যে
করবে ওরা তৈরি,
ছাতি নিয়ে থাকবে ওরা
আকাশ যখন বৈরি।
সিংহ তখন আমার গোলাম
আমি যখন রাজা,
ছোট্ট একটু ভুলের জন্য
দেবো অনেক সাজা।
হাতির পিঠে চড়বো আমি
যখন রাজ্য ঘুরবো,
আন্যায় যখন করবে ওরা
তাদের জেলে পুরবো।।
"কাদের_করেছো_পর"
-শুভ জিত দত্ত
যারা তোমার করলো বড়
তাদের দূরে ঠেলো,
সুখে দুঃখে ছিলো যারা
বাইরে তাদের ফেলো।
ছোটো থেকে পরম যত্নে
লালন করলো যারা,
বৃদ্ধাশ্রমে রাখলে তাদের
কেমন আছে তারা।
ভূলে গেলে তাদের তুমি
ছিলো যারা আপন,
এখন তুমি মস্ত বড়ো
তাদের করছো গোপন।
অভাব থেকে দূরে রেখে
যারা আনলো এখানে,
তাদের ছেড়ে কেমন করে
আছো তুমি ওখানে।
সম্পদ নিয়ে মহা ব্যস্ত
ভুলো আছো কাদের,
যারা করেছে তোমার জন্যে
খোঁজ রাখো তাদের।।
"হারিয়ে যাওয়া"
-শুভ জিত দত্ত
হঠাৎ করে রাগলে পরে
তোমায় লাগে ভালো,
খানিক বাদে বায়না ধরো
ঘুরে আসি চলো।
জলনা দিয়ে অবাক হয়ে
আকাশ চেয়ে দেখো,
সোনা রোদের হাসি টুকু
গায়ে একটু মেখো।
ছাদের কোনে মনে মনে
যখন গান গাইতে,
সারা দিনের ক্লান্তি শেষে
ভুলে যেতে খাইতে।
আমায় সাথে চলতে যখন
উদাস হয়ে থাকতে,
মনের কোণে হঠাৎ তুমি
কিছু ছবি আঁকতে।
আড়াল থেকে চেয়ে থাকি
তখন তুমি রাঁধতে,
তোমার চুলের পরশ নিতাম
যখন তুমি বাঁধতে।।
"সার্থ হাসিল"
শুভ জিত দত্ত
আকাশ কুসুম চিন্তা নিয়ে
অবাক হয়ে ভাবি,
বললো নাতো অভাব দেখে
কিছু একটা খাবি।
সেদিন ছিলাম ওদের পাশে
ছুটে গেছি সুখে,
আমার অভাব দেখে ওরা
বলবে কিছু মুখে।
সার্থ নিয়ে সবাই চলে
যখন হাসিল হবে,
আবার কবে লাগতে পারে
খুঁজবে তোমায় তবে।
কারো অধীনে থাকলে পরে
খালি সুযোগ নেবে,
বুঝে শুনে একটু জেনে
চলবে তুমি ভেবে
ভুবন মাঝে জানার আছে
বোঝার আছে কিছু,
ঠকলে তুমি জানবে বেশি
চলবে ওরা পিছু।
অনুরাধার অনুপ্রেরণা-শুভ জিত দত্ত
দিন গুলো এভাবেই যাবে ভাবিনি কখনো একের পর এক পুরানো দিন গুলো পার করে কখন যে এখানে এসেছি, ফিরে তাকালেই খুব কষ্ট হয়।
তখন এস.এস.সি সবে মাত্র শেষ করলাম।আমি ছোট ছিলাম দায়িত্ব কাকে বলে কখনো বুঝতে দেয় নি বাবা ও বড় ভাই। তবু চেষ্টা করতাম বাবার সাথে সাথে থেকে যদি একটু শেখা যায় কিছু। এভাবে চলে যাচ্ছিল বড় ভাই সিন্ধান্ত নিল সে আলাদা থাকবে ।এই খবর বাবার কানে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি ঠিক মেনে নিতে পারেনি। পড়াশোনা চালাতে পারবো কিনা ভাবিনি তার পর যাই হয়েযাক পড়াশোনা ছাড়িনি । চালিয়ে গেছি শত কাজের ভেতর বাবার সাথে সাথে সব কাজ করেছি বাবাকে একা হতে দিইনি কখনো।ক্রমে দায়িত্ব বাড়তে থাকলো ছেড়ে দিতে হলো পড়াশোনা আস্তে আস্তে খামার আরোও বড় হলো ।বাবা মার সিদ্ধান্তে বিয়েটাও সেরে নিতে হলো। ঠিক বাবা মার পর অনুপ্রেরণা বেশি পেয়েছি সে আমার অনুরাধা ।একে একে বাবা মা ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে তখন সে আমার বাবা মার অভাব বুঝতে দেয় নি।সে আসার পর শুরু হয় আমার জীবনের পালা বদল ঘুরে দাঁড়াতে থাকে আমার ভাগ্যের চাকা।একটি খামার থেকে আমার পাঁচটি খামার আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আমার কাছ থেকে টাটকা মাছ সবজি গবাদি পশু নিয়ে যায়। আমার অপূর্ণ আশা পূরণ হলো ঠিকই তবে অন্যের অধীনে নয় নিজের অধীনে।এখন আমার খামারে কাজ করে শত শত তরুণেরা জীবিকা নির্বাহ করছে।আর সবটা হয়েছে ইচ্ছা শক্তি ও ধৈর্যের জন্য। আমার ছেলেকে আর কখনো পাঠাবো না কারো অধীনে কাজ করার জন্য।একের পর এক বিভিন্ন পুরষ্কার পেতে শুরু করলাম তখন আমি সবার কাছে একটি অনুপ্রেরণা নাম সৌমেন দাস।সেই অভাব থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আজ আমি এখানে।এখন ভাবলে কষ্ট হয় যেই দিন গুলো তে বাবা মার দুমুঠো ভাত জোটে নি।বড় ভাই দেখেও না দেখার ভান করেছে।শত অভাবের মাঝেও ছেড়ে যায় নি অনুরাধা।সে ছিল তাই আমি এখানে বার বার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে যত বার হেরেছি ভাগ্যের সাথে খালি এই অভাব দেখো ঠিক কোথায় চলে যাবে আমার তখন ঘুরে দাঁড়াবোই।এই ছিল আমার ছোট্ট অনুপ্রেরণার গল্প।।