প্রিয় ছবি
শুভ জিত দত্ত
আমার বাবার স্বপ্ন আমি একজন বড় আইনজীবী হবো।বাবার অনুরোধে কলেজ জীবন শেষ করে আইন বিষয় নিয়ে ভর্তি হলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াতে।আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে টুকটাক রাজনীতি তে আমার পদচারণা শুরু হয় ।তারপর পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতি সমান তালে এগিয়ে চলতে থাকে।একটা সময়ে রাজনীতি অঙ্গনে একটা দাপুটে নেতা হিসাবে সবার মাঝে নিজেকে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়। রাজনীতি ও সংস্কৃতি তারপর পড়াশোনার চাপ আর বাবার স্বপ্ন মাথার উপরে ছিল যার কারণে ব্যস্ততা বিহীন কখনো থাকতে পারিনি। বছরে একবার বাড়িতে যেতাম কারণ তাদের দেখার জন্য মন ছুটে যেত ।বাড়ি গেলে বাবা মা খুব ব্যস্ত হয়ে যেতেন অনেকদিন পর ছেলে বাড়িতে এসেছে । মার যেন বিরাম নেই আমার প্রিয় খাবারগুলো রান্না করার জন্য মা এক প্রকার ব্যস্ত হয়ে থাকতেন যে কয়টা দিন আমি বাড়িতে থাকতাম। খুব বেশি বাড়ি যাওয়ার সময় আর সুযোগে হয়ে উঠতো না এতটা চাপ মাথার উপর ছিল। এতো ব্যস্ততার মাঝে আমার জীবনে কখনো ভালোবাসা আসে নি , হয়তো ভালো লাগতো কিন্তু কখনো সময় করে কারো সাথে সম্পর্কে জড়ানো হয়নি। একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হয়ে গেল তারপর ,ঢাকাতে পারি জমালাম সেখানে কোন রকমে একটা ম্যাচে দুই বন্ধু মিলে শুরু করলাম পড়াশোনা বেশ কয়েকবার বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হয়, তারপর হঠাৎ কি এমন পরিবর্তন এলো আমার জীবনে প্রথম বিসিএস এ আমি প্রশাসন ক্যাডার এ সুপারিশ প্রাপ্ত হয়। যেহেতু আমার জীবনে কেউ তেমন ছিল না, সেহেতু বাবা মা বাড়ি থেকে আমার জন্য মেয়ে দেখতে থাকে বিয়ের বাজারে তখন আমার মূল্য অনেক বেশি কারণ আমি একজন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আমি আমার বিয়ের ভার সম্পূর্ন আমার মা-বাবার উপরে ছেড়ে দিই, অনেক ভালো জায়গা থেকে সম্বন্ধ এলেও আমার একটাই চাওয়া ছিল তাদের অর্থবিত্ত না থাকলেও ভালো পরিবারের হয় যেন। একটা সময় হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন এলো দিন তারিখ সব ঠিক আমাকে অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে তারপর নিজের নতুন জীবন শুরু করতে হবে। যেহেতু আমার জীবনে কখনো ভালোবাসা আসে নি এই মানুষটা কে পেয়ে আমার জীবনের নতুন গল্প লিখতে শুরু করলাম। তাকে প্রতিটা মুহূর্ত সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেছি ,তাকে কখনো চোখের আড়াল করতে পারিনি । সেই মানুষটাও আবার আমি অফিসে থাকলে বারবার ফোনে আমার খোঁজ রাখতো। আমি না খাওয়া পর্যন্ত সে কখনো খাইনি ,এইভাবে বেশ সুন্দর মুহূর্ত গুলো পার করছিলাম। সেই মানুষটা আমার কাছে লক্ষ্মী ছিল ,কারণ সেই মানুষটা আসার পর থেকে আমার জীবনের সফলতার দরজা গুলো খুলতে শুরু করল যে দরজা গুলো খুলতে বাকি ছিল তাও খুলতে শুরু করলো।তারপর আমাদের দুজনের ঘরে আলো করে একটা ফুটফুটে লাল পরী নেমে এলো । কখন যে আমাদের সংসারের একটা যুগ পার হয়ে গেল ,এই বন্ধনের মাঝে কখনো মনোমালিন্য কিংবা কথা কাটাকাটি হয়নি। অফিসে গিয়ে হঠাৎ একটা চিঠি হাতে পেলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সংবর্ধনা দেবেন। সে মানুষটি সামনে থেকে দেখবে আমি কার হাত থেকে এই পদক গ্রহণ করছি।সেদিন আমাকে একটু আগেভাগে বেরিয়ে যেতে হল, আমি অবশ্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাকে বলে বের হলাম আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো তোমরা সাবধানে চলে এসো। আর কিছুক্ষণ পরে আমার নাম ডাকা হবে পুরস্কার গ্রহণের জন্য কিন্তু সে মানুষটাকে দেখছি না এতটা সময় পার হয়ে গেল। পুরস্কার গ্রহণ করলাম কিন্তু আমার চোখ সেই মানুষটি কে খুঁজেছিল ।ভালো লাগা কাজ করছিল না একদম সেই মানুষটিকে না দেখতে পেয়ে। গেট থেকে বের হতেই হঠাৎ ফোন এলো আমার সহধর্মিনী এবং আমার পরীটি মারাত্মক এক্সিডেন্ট এ হসপিটালে ভর্তি। হসপিটালে আমার একটা দিন নির্ঘুম খুব রাত কাটলো কখন তার ডাক শুনবো। আমি যে তাদের দেখাতে পারলাম না আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিশেষ পুরষ্কার পেয়েছি । তিনদিন পার হয়ে গেল আমার মেয়েটি আমার কোলে ফিরে এলেও ফিরে এলো না সেই মানুষটি । আমি এর পর কাউকে আর কখনো তার জায়গাটি দিতে পারিনি মা মরা মেয়েটিকে আমি কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দিই নি। দেখতে দেখতে সে অনেক বড় হয়ে গেল কলেজ জীবনে শেষ করলো তারপর একটা সময় ভালো একটা ঘরে সে চলে গেল। আমাকে একা ফেলে এখন আমার সঙ্গী সেই মানুষটির ছবি কখনো একা থাকলে সে মানুষটার ছবিকে জড়িয়ে তাকে অনুভব করি প্রতিটা মুহূর্তে। তুমি সব সময় আমার পাশে আছো ছায়ার মত তোমাকে ছাড়া আমি একবিন্দু ভালো থাকতে পারি না তুমি এভাবে পাশে থেকো।
No comments:
Post a Comment