ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ সালে বংলা বর্ণমালা শিক্ষার পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
গ্রন্থটি যে শুধু বিদ্যাসাগরের জীবৎকালেই সমাদৃত হয়েছিল তাই নয়, আজ গ্রন্থপ্রকাশের সার্ধ-শতবর্ষ পরেও এর জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি।
দুই পয়সা মূল্যের এই ক্ষীণকায় পুস্তিকার প্রকাশ বাংলার শিক্ষাজগতে ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা।
বিহারীলাল সরকারের রচনা থেকে জানা যায় মফস্বলে স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার সময় পালকিতে বসে পথেই বর্ণপরিচয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন বিদ্যাসাগর।
অবোধ্য-দুর্বোধ্য শব্দকদম্ব মুখস্থ করার পরিবর্তে শিশু পরিচিত শব্দ শিখছে ও স্বচ্ছন্দ বাংলা গদ্য রচনার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এভাবে সহজ সাবলীল ও আধুনিক বাংলা গদ্যের পথ প্রশস্ত করে দিলেন বিদ্যাসাগর সব শিক্ষিত বাঙালির জন্য।
বইয়ের ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, সেই ১৫০ বছর আগেও বিদ্যাসাগর তাঁর শিশুতোষ রচনায় ধর্মীয় অনুষঙ্গ টানেননি। কাহিনীর সঙ্গে ধর্মের ও ধর্ম সংস্কারে সংস্রব নেই, জোর দিয়েছেন তিনি নীতিশিক্ষার ওপর, ভালোমন্দ বুঝে সচ্চরিত্র গঠনের ওপর। সদাসৎ বোঝানোর জন্য হয়তো একটু বেশিই ব্যগ্রতা প্রকাশ পেয়েছে, রবীন্দ্রনাথ যা নিয়ে মৃদু আপত্তিও করেছেন। সেকালের ধর্মসংস্কারের বাহূল্য, আড়ম্বর ও জবরদস্তির কথা ভাবলে শিশুপাঠ্য গ্রন্থে তাঁর এই ধর্মনিরপেক্ষ মানসের প্রতিফলন দেখে বিস্মিত ও আপ্লুত হতে হয়।বিদ্যাসাগর আধুনিক শিক্ষক-শিক্ষণেরও যেন পথিকৃৎ। তিনি পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শও লিখে গেছেন। বর্ণপরিচয়-এর দুটি ভাগেই বর্ণযোজনার নির্দেশিকা দিয়েছেন