শীতের ছুটি -শুভ জিত দত্ত
বছর জুড়ে অপেক্ষা কখন আসবে শীত ,অপেক্ষা যেন শেষ হওয়ার নয় বরং আরো দীর্ঘ হয়। শহর আর গ্রামের শীত আসে একটু অন্য ভাবেই । গ্রামের শীতের সকালে ফুটে ওঠে চির চেনা প্রকৃতির রূপ। আমার বাবা পেশায় একজন সরকারী চাকুরীজীবী, তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা অফিস নিয়ে পড়ে থাকেন । কয়েক বছর অন্তর আবার ট্রান্সফার তো আছেই সব কিছু নিয়ে নতুন জায়গায় ওঠা সে এক মহা বিড়ম্বনা। বার বার স্কুল পরিবর্তন সেই সাথে নতুন বন্ধু তৈরি হতে বেশ কিছুটা সময় সেখানে চলে যায়।এই শহরে বন্দী জীবন ঘরের মধ্যে কেটে যায় অনেকটা সময় ,সুযোগ থাকে না মাঠে খেলা করার। ঘরের মধ্যে যা থাকে তাই নিয়ে টুকটাক হাত পা নড়াচড়া করা এই আর কি।যখন সুযোগ হয় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার তখন যেন নিজেকে খাঁচা ছাড়া পাখির মতো মনে হয় ।দেখতে দেখতে বার্ষিক পরীক্ষাও চলে এলো আর পরীক্ষা শেষ হলেই গ্রামে যাব ভাবতেই যেন মনের ভেতর উথাল পাথাল শুরু হয়ে যায় । কদিন ধরে গোছগাছ চলতেই থাকে এক সময় শেষ হয়ে আসে এই প্রস্তুতির পালা।বাবা কে থেকে যেতেই হয় তিনি আমাদের রেখে আবার চলে আসেন ।আমরা গ্রামে বেশ মজা করি কিন্তু বাবা তিনি শহরে থাকলেও তার মনটা আমাদের এখানেই পড়ে থাকে সময়ে অসময়ে বার বার ফোনে খোঁজ নেন, কটা দিন তার খাওয়ার অসুবিধা তো থাকেই। গ্রামে শীতকালীন সবজি আর পিঠা পুলি, খেজুরের রস, গুড় কোনো কিছুর অভাব নেই, মুক্ত পাখির মত এদিক ওদিক ছুটে বেড়ানো আর খেলাধুলা তাতেই সময় কখন যে চলে যায় সে কি আর টের পাওয়া যায়।শহরে থেকে গ্রামে এলে মা ও এ বাড়ি ও বাড়ি করে এর ওর সাথে কথা বলে সময় কাটায় শহরে সেই সুযোগ থাকে না সেখানে সবাই যে যার মত ব্যস্ত থাকে। শীতের ছুটি খুব বেশি দিনের না তবু কখন যে ফুরিয়ে যায় টের পাওয়া যায় না ।এই তো ছিলাম বেশ আনন্দে গ্রামের বন্ধুদের নিয়ে এবার তাদের বিদায় দেয়ার পালা। সময় হয়েছে আবার ফিরে যাওয়ার ,নতুন ক্লাস নতুন বই । নতুন শিক্ষকের পাঠদান সাথে একঝাঁক নতুন বন্ধুদের পরিচয়ের সুযোগ ঘটে। বিদায় নিতে ইচ্ছে করে না তবু আবার আসবো কোনো এক ছুটিতে এই আশা সঞ্চার করে শহরের ট্রেন ধরা।বাবা অপেক্ষা করছে স্টেশনে কখন পৌঁছাবে আমাদের ট্রেন ,বার বার ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন।আমার কপালে ছিল জানলার ধারে ছিট টা চোখে পড়লো দূর দিগন্তের গ্রামের দৃশ্য তখন মনটা আবার সেই গ্রামে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে ভেসে আসছে। ফিরে আবার আসবো ,আবার আসবো এই বিদায় চির বিদায় নয় ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি।।