রুদ্ররূপে নারী
-শুভ জিত দত্ত
হিংস্রতা প্রকাশ পায় পশুদের মধ্যে,
তবু মানুষ কেমন করে পারে,
নরখাদক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে,
খাবলে পড়েছে তার শরীরে।
শত আঘাতের চিহ্ন গায়ে নিয়ে,
মৃত্যুর সাথে করেছে লড়াই,
মানবিকতাও যেখানে হার মানে,
শকুন রূপী অমানুষের কাছে।
প্রতিবাদ করে কেন বার বার,
চাইতে হবে বিচার?
ওরাও একদিন ঘুরে দাঁড়াবে,
করবে সেদিন আঘাত।
ধর্ষিতা নয়, সেদিন রুদ্ররূপে,
মহাকালের বার্তা নিয়ে,
খড়্গ হাতে করবে মুন্ডু ছেদ,
সেদিন অট্টহাসি হেসে উঠবে,
এই সমাজের নারী।
শুভজিৎ দত্তের কবিতা "রুদ্ররূপে নারী" আমাদের সমাজের নারীদের প্রতি অবিচার ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ। কবিতাটি খুবই গভীর ও তীব্র অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ, যা সমাজের অমানবিকতার চিত্র তুলে ধরে।
প্রথম স্তবকে কবি দেখিয়েছেন, পশুরাও যেখানে হিংস্র, সেখানে মানুষ কেমন করে আরও নৃশংস হয়ে উঠতে পারে। নরখাদকদের মত ঝাঁপিয়ে পড়া, অসহায় নারীর দেহকে ক্ষতবিক্ষত করা—এতটাই নিষ্ঠুর যে তা মানবিকতাকেও হার মানায়। এই দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে কবি আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকটি তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয় স্তবকে, কবি নারীকে লড়াইয়ের মূর্ত রূপে উপস্থাপন করেছেন। শত আঘাতের চিহ্ন গায়ে নিয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করার যে দৃশ্য, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মানবিকতা যেখানে অসহায়, সেখানে শকুনরূপী অমানুষরা নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।কবিতার তৃতীয় স্তবকে, কবি প্রশ্ন তুলেছেন—প্রতিবাদ কেন বারবার করতে হবে? কেন বারবার বিচারের দাবি জানাতে হবে? এখানে কবি এক সুপ্ত প্রতিশোধের ইঙ্গিত দিয়েছেন। একদিন এই নির্যাতিতারা ঘুরে দাঁড়াবে এবং তাদের উপর হওয়া অন্যায়ের পাল্টা আঘাত করবে।
শেষ স্তবকে, শুভজিৎ দত্ত নারীদের রুদ্ররূপের মাধ্যমে একটি জাগ্রত নারীশক্তির ছবি এঁকেছেন। ধর্ষিতা নারী নয়, বরং সেদিন নারী রুদ্ররূপে মহাকালের বার্তা নিয়ে খড়্গ হাতে উঠবে। সেদিন সমাজের অমানবিকতার বিরুদ্ধে নারীর অট্টহাসি প্রতিধ্বনিত হবে, যা পুরো সমাজকে কাঁপিয়ে দেবে।
"রুদ্ররূপে নারী" কবিতাটি সমাজের অব্যক্ত অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি জাগরণের আহ্বান। এটি নারীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপরাজেয় শক্তির প্রতীক, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রতিশোধ নেবে। কবি শুভজিৎ দত্ত নারীর এই শক্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং সমাজে পরিবর্তনের বার্তা তুলে ধরেছেন।